বাচ্চা হওয়ার পর হাসবেন্ড এর চেঞ্জ হয়ে যাওয়ার কারণ কি? এই একটা বিষয় নিয়ে খুব ভয় পেতাম। তার সাথে শেয়ার করতাম। সেও আস্বস্ত করতো তেমন কিছুই হবে না। কিন্তু সেটাই হলো!! নিজেদের মধ্যে এতো ভালো বোঝা পড়া,যত্ন, সম্মান,ভালোবাসা সব শেষ। ৫-৬ মাসের বাচ্চা সারাদিন একা সামলাচ্ছি। ঘুম, গোসল, খাওয়া কিচ্ছু ঠিক নেই। মানিয়ে নিচ্ছি। নিজের থেকে যতটা পারছি হাসবেন্ড এর খেয়াল রাখছি যত্ন ও করছি। আগের মতো হয়তো পারছিনা। সে একদম চেঞ্জ। আগে যে ব্যপার গুলো নিয়ে আমরা মজা করতাম সেগুলো এখন তার রাগের কারণ। কিছু লাগবে কিনা জানতে চাইলেও সে খারাপ ব্যবহার করছে। আমি তার সাথে ঝগড়া, তর্ক কিছুই করছিনা। কষ্ট হলেও সব স্বাভাবিক আছে এভাবেই চলছি। কিন্তু উনি আমাকে একদমি সহ্য করতে পারছে না। একটা ছেলে যেমন পার্টনার আশা করে তার সবটাই আমার মতো করে চেষ্টা করেছি করার এতো দিন ঠিক ও ছিলো সব।কিন্তু এখন আমার প্রতিটা স্টেপ তার কাছে দোষের মনে হচ্ছে। প্রচন্ড খারাপ ব্যবহার করছে, কথা বলে না ঠিক ভাবে।আমি সারাদিন বাচ্চা নিয়ে কি করি না করি একবারও খোঁজ নেয় না। এর আগে শর্ত দিয়েছিল আমার বাবা মায়ের সাথে যাতে বেশি যোগাযোগ না করি ওখানে না যায়, তার বাবা মায়ের খোঁজ রাখতে হবে তাহলে ভালো ব্যবহার করবে। সেটাও মেনে নিয়েছি। এখন যত টুকু বুঝতে পারছি সে চাচ্ছে সে নিজে কিছু বলবে না কিন্তু তার চোখ দেখে মন পড়ে আমাকে সব বুঝে নিতে হবে। আমি তার চেষ্টা ও করি সব সময়। কিন্তু আমিও তো মানুষ! এটা মনে হয় সে ভুলে গেছে😄 এসবের কারণে আমার পোস্ট পার্টাম ডিপ্রেশন গ্রো করেছিলো বাজে ভাবে, সুইসাইড করতে মন চাইতো সারাক্ষণ। অনেক কষ্টে নিজেই নিজেকে সামলে নিয়েছি। একটা মানুষের হঠাৎ করে এমন আকাশ পাতাল চেঞ্জ হয় কি করে??

আপনার লেখাটা পড়ে বুঝতে পারছি—আপনি অবিশ্বাস্য রকম মানসিক চাপ, একাকীত্ব আর বেদনা নিয়ে দিন পার করছেন
আপনার অনুভূতিগুলো ১০০% ন্যায্য এবং স্বাভাবিক। আপনি কোনো ভুল করেননি। বরং আপনি দেখছি যতটা সম্ভব সমঝোতা, সহনশীলতা এবং ভালোবাসা দিয়ে সম্পর্কটা ধরে রাখার চেষ্টা করেছেন।

এখন প্রশ্ন—

Table of Contents

“একজন স্বামী বাচ্চা হওয়ার পর এমন হঠাৎ বদলে যায় কেন?”

এর পিছনে কয়েকটি গভীর বাস্তব কারণ থাকে, যেগুলো অনেক দম্পতি বোঝেই না, তাই সম্পর্ক ভেঙে যেতে থাকে। একটু গভীরে দেখি—


✅ ১) বাচ্চা হওয়ার পর সম্পর্কের ডাইনামিক বদলায়—এটা বাস্তবতা

শুধু আপনারই না, বিশ্বজুড়ে গবেষণায় দেখা যায়:

  • বাচ্চা জন্মের পর ৬৭% দম্পতির সম্পর্কের মধ্যে টেনশন বাড়ে
  • স্বামী-স্ত্রী দুজনই নিজেদের “পুরনো জীবন” ফিরে না পেয়ে অস্থির হয়ে পড়ে
  • নতুন দায়িত্ব, ঘুমের অভাব, চাপ—সবকিছু মানুষকে বদলে দেয়

কিন্তু বদল মানে খারাপ মানুষ হয়ে যাওয়া না—বরং সে নিজেই মানসিকভাবে সামলাতে পারছে না।


✅ ২) স্বামীরও পোস্ট-পার্টাম মানসিক পরিবর্তন হতে পারে

অনেকেই এটা জানে না—
পুরুষদেরও ৪–২৫% পর্যন্ত পোস্ট-পার্টাম ডিপ্রেশন হয়

লক্ষণগুলো:

  • সহজেই রেগে যাওয়া
  • ইগো বেশি হওয়া
  • মন খারাপ
  • সঙ্গীর প্রতি আগ্রহ কমে যাওয়া
  • ছোট বিষয়েও ঝামেলা করা
  • পরিবার থেকে স্ত্রীকে আলাদা করতে চাওয়া (control behavior)

আপনার স্বামীর আচরণ এর সাথে খুব মিলে যায়।


✅ ৩) নতুন বাচ্চা আসার পর পুরুষের মনে একটা ভয় তৈরি হয়

  • “স্ত্রী এখন আর আমাকে সময় দেয় না”
  • “আমি সেকেন্ড হয়ে গেলাম”
  • “তার জীবন শুধু বাচ্চা-কেন্দ্রিক”

এই ভয় অনেক সময় রাগ, দূরত্ব, খারাপ ব্যবহার আকারে বের হয়।


✅ ৪) Control & dominance behavior

আপনি বললেন—

বাবা–মায়ের সাথে যোগাযোগ কমাতে নিষেধ করেছে
তার বাবা-মায়ের খোঁজ নিতে বলেছে না নিলে রাগ করে

এটা healthy relationship-এর আচরণ না।
এটা কন্ট্রোল করার চেষ্টা। মানুষ যখন নিজের অনিরাপত্তা সামলাতে পারে না তখন অন্যকে নিয়ন্ত্রণ করে।


✅ ৫) আপনি ক্লান্ত, অবসন্ন, একা—সে সেটা বুঝছে না

আপনি ৫–৬ মাসের বাচ্চা একা সামলাচ্ছেন।

একজন মা:

  • ২৪ ঘণ্টা ক্লান্ত থাকে
  • ঘুম ভাঙা থাকে
  • শরীর ব্যথা
  • মন খারাপ
  • identity পরিবর্তন
  • postpartum hormonal crash

এই সময়ে স্বামীর দায়িত্ব wife-support করা।
কিন্তু আপনার ক্ষেত্রে উল্টোটা হয়েছে।


❗আপনার অবস্থাকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই

আপনি লিখলেন:

সুইসাইড করতে মন চাইতো…

এটা খুবই সিরিয়াস বিষয়।
এটা প্রমাণ করে আপনি অসহায় অবস্থায় ছিলেন।
আপনি নিজেকে সামলে নিয়েছেন—আপনি শক্তিশালী; কিন্তু এত কষ্ট কারো একার বহন করা উচিত নয়।


তাহলে তিনি হঠাৎ এভাবে বদলে গেলেন কেন?

✔ কারণ ১: তিনি নিজেই মানসিকভাবে স্ট্রেসড

✔ কারণ ২: দায়িত্বের চাপ সামলাতে পারছেন না

✔ কারণ ৩: নিজের প্রতি স্ত্রী’র আগের “attention” পাচ্ছেন না বলে ক্ষুব্ধ

✔ কারণ ৪: control দিয়ে সম্পর্ক সামলানোর ভুল চেষ্টা

✔ কারণ ৫: তিনি বুঝছেন না আপনি কত কষ্ট করে দিন পার করছেন

✔ কারণ ৬: তার মধ্যেও postpartum irritability / depression থাকতে পারে

✔ কারণ ৭: ঈর্ষা/অহং/অপরিপক্বতা / emotional immaturity

এসবের মিশ্রণে আচরণ বদলে যায়।


এখন আপনার জন্য বাস্তবসম্মত পথ কী?

🟢 ১) নিজেকে দোষী ভাববেন না

আপনি যথেষ্ট করেছেন।
এখন নিজের অনুভূতির জায়গা দিন।

🟢 ২) খুব শান্তভাবে একদিন কথা বলার চেষ্টা করুন

এইভাবে:

“আমি তোমাকে দোষ দিতে চাই না। শুধু চাই তুমি বুঝো—আমি একা বাচ্চা সামলাতে খুব ভেঙে পড়ি। আমি তোমার সাপোর্ট চাই। তুমি রাগ করলে আমি ভয়ে থাকি। আমরা আগের মত টিম হতে চাই।”

এভাবে বললে মানুষ defensiveness কম দেখায়।

🟢 ৩) সীমারেখা (boundaries) সেট করুন

আপনার বাবা–মায়ের সাথে যোগাযোগ কমিয়ে দেওয়া—এটা healthy নয়।
মৃদুভাবে বলুন:

“আমি দুই পক্ষের জন্যই খোঁজ রাখবো, এতে আমাদের সম্পর্কে কোনো সমস্যা হবে না।”

🟢 ৪) postpartum screening দরকার হলে encourage করুন

সম্ভব হলে সে যেন একজন কাউন্সেলর/ডাক্তারকে দেখায়—
কারণ আচরণ দেখে মনে হচ্ছে তার মধ্যেও irritability/anger disorder বেড়েছে।

🟢 ৫) আপনার নিজের মানসিক সাপোর্টও দরকার

আপনি postpartum depression থেকে বের হয়েছেন—এটা গর্বের ব্যাপার। কিন্তু এখনও সাহায্য নেওয়া যায়:

  • trusted friend
  • family
  • online women support group
  • counselor

একাই সব বহন করা অমানবিক।


❗সবশেষে—আপনি একা নন

এ ধরনের পরিস্থিতি অস্বাভাবিক না, কিন্তু অস্বাস্থ্যকর
আপনার স্বামী বদলে গেছে কারণ সে পরিস্থিতি সামলাতে পারেনি—
এর দায় সম্পূর্ণ আপনার নয়।

 

Leave a Comment