শুক্রাণুর সংখ্যা বৃদ্ধি এবং উর্বরতা উন্নত করার উপায়
আজকের দিনে অনেক দম্পতি গর্ভধারণের চেষ্টা করলেও বিভিন্ন কারণে সফল হতে পারেন না। এর অন্যতম প্রধান কারণ হলো পুরুষের শুক্রাণুর সংখ্যা ও মানের সমস্যা। গবেষণা বলছে, বিশ্বব্যাপী পুরুষদের মধ্যে শুক্রাণুর সংখ্যা কমে যাওয়া (Low Sperm Count) একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে চিন্তার কিছু নেই। সঠিক খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাপন এবং চিকিৎসার মাধ্যমে শুক্রাণুর মান উন্নত করা সম্ভব।
কেন শুক্রাণুর মান গুরুত্বপূর্ণ?
উর্বরতা বা ফার্টিলিটি মূলত নারীর ডিম্বাণু ও পুরুষের শুক্রাণুর মানের উপর নির্ভর করে। যদি শুক্রাণুর সংখ্যা কম হয়, অথবা গতিশীলতা (motility) ও আকৃতি (morphology) ঠিক না থাকে, তবে ডিম্বাণুর সাথে নিষিক্ত হওয়া কঠিন হয়ে যায়। এ কারণে শুক্রাণুর মান উন্নত করা সন্তান ধারণের জন্য অপরিহার্য।
শুক্রাণুর মান উন্নত হতে কত সময় লাগে?
অনেকেই জানেন না, একটি শুক্রাণু তৈরি হতে গড়ে ৯০ দিন (প্রায় ৩ মাস) সময় লাগে। অর্থাৎ আজ আপনি যদি জীবনযাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনেন, তবে অন্তত তিন মাস পর থেকে এর সুফল পেতে শুরু করবেন। তাই গর্ভধারণের পরিকল্পনা করার আগে কমপক্ষে ৩–৬ মাস আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া উচিত।
শুক্রাণুর সংখ্যা বৃদ্ধির কার্যকর উপায়
১. সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন
পুষ্টিকর খাবার শুক্রাণুর মান বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে –
- ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড (মাছ, বাদাম, অলিভ অয়েল)
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস (ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, সেলেনিয়াম, জিঙ্ক)
- ফোলেট ও ভিটামিন ডি
এ সব উপাদান শুক্রাণুর DNA রক্ষা করে এবং গুণগত মান বাড়ায়।
অন্যদিকে অতিরিক্ত প্রসেসড ফুড, চর্বি ও চিনি শুক্রাণুর মান কমিয়ে দেয়।
২. নিয়মিত ব্যায়াম করুন
- প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট মাঝারি ব্যায়াম (হাঁটা, সাইক্লিং, যোগা) করুন।
- ব্যায়াম রক্তপ্রবাহ ও টেস্টোস্টেরন হরমোন বাড়িয়ে শুক্রাণুর গুণমান উন্নত করে।
তবে অতিরিক্ত কঠোর অনুশীলন (heavy endurance training) করলে টেস্টোস্টেরন কমে যেতে পারে।
৩. স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখুন
অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা পুরুষের হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে, ফলে শুক্রাণুর মান খারাপ হয়।
- স্থূল পুরুষদের শুক্রাণুর সংখ্যা ৩০–৪০% কম থাকে।
- ওজন কমালে এবং তা বজায় রাখলে উর্বরতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ে।
পড়ুন: স্থূলতা ও উর্বরতা সমস্যা
৪. ধূমপান ত্যাগ করুন
- ধূমপান শুক্রাণুর সংখ্যা, গতিশীলতা ও বীর্যপাতের পরিমাণ কমায়।
- IVF বা ART চিকিৎসার সফলতার হারও ধূমপানের কারণে কমে যায়।
সহায়তা নিন: ধূমপান ত্যাগের কার্যকর উপায়
৫. অ্যালকোহল কমিয়ে দিন
- মাঝে মাঝে অল্প পরিমাণে মদ্যপান ক্ষতিকর নয়।
- তবে প্রতিদিন বা অতিরিক্ত মদ্যপান করলে টেস্টোস্টেরন কমে যায়, শুক্রাণুর মান খারাপ হয়।
৬. ক্ষতিকারক ওষুধ এড়িয়ে চলুন
- গাঁজা, কোকেন, হেরোইন ও অ্যানাবলিক স্টেরয়েড শুক্রাণুর মান স্থায়ীভাবে নষ্ট করতে পারে।
- দীর্ঘমেয়াদী স্টেরয়েড ব্যবহার বন্ধ করলে পুনরুদ্ধার হতে কয়েক বছর লেগে যেতে পারে।
৭. মানসিক চাপ কমান
স্ট্রেস হরমোন কর্টিসল বৃদ্ধি করে, যা টেস্টোস্টেরন কমিয়ে শুক্রাণু উৎপাদনে প্রভাব ফেলে।
✅ মেডিটেশন, নিয়মিত ঘুম ও পরামর্শ গ্রহণ চাপ কমাতে সাহায্য করে।
৮. ক্ষতিকারক রাসায়নিক এড়িয়ে চলুন
- কীটনাশক, ভারী ধাতু, প্লাস্টিকের রাসায়নিক শুক্রাণুর DNA ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
- কৃষি বা কারখানায় কাজ করলে সুরক্ষা সরঞ্জাম ব্যবহার করুন।
৯. যৌনবাহিত রোগ পরীক্ষা করুন
- চিকিৎসা না করা এসটিআই যেমন ক্ল্যামাইডিয়া বা গনোরিয়া বন্ধ্যাত্বের কারণ হতে পারে।
- নিয়মিত স্ক্রিনিং করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিন।
১০. অণ্ডকোষ ঠান্ডা রাখুন
- অণ্ডকোষের আদর্শ তাপমাত্রা শরীরের তাপমাত্রার চেয়ে প্রায় ২ ডিগ্রি কম হওয়া দরকার।
- ল্যাপটপ কোলে রাখা, টাইট পোশাক পরা বা গরম পানিতে বেশি সময় থাকা এড়িয়ে চলুন।
১১. স্বাস্থ্য সমস্যার নিয়ন্ত্রণ করুন
- ডায়াবেটিস, হরমোন সমস্যা বা জেনেটিক রোগ অনেক সময় শুক্রাণুর মান নষ্ট করে।
- সঠিক চিকিৎসা নিলে উর্বরতা অনেকাংশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
শুক্রাণুর সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ)
প্রশ্ন ১: শুক্রাণুর সংখ্যা কত হলে গর্ভধারণ সম্ভব?
➡️ সাধারণত প্রতি মিলিলিটার বীর্যে ১৫ মিলিয়নের বেশি শুক্রাণু থাকলে গর্ভধারণের সম্ভাবনা ভালো থাকে।
প্রশ্ন ২: শুক্রাণু টেস্ট কোথায় করানো যায়?
➡️ যে কোনও মানসম্মত ল্যাবরেটরি বা ফার্টিলিটি সেন্টারে সিমেন অ্যানালাইসিস টেস্ট করা যায়।
প্রশ্ন ৩: কি খেলে শুক্রাণুর সংখ্যা বাড়ে?
➡️ মাছ, বাদাম, ডিম, শাকসবজি, ফলমূল, দুধ ও ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার শুক্রাণুর মান বাড়ায়।
প্রশ্ন ৪: শুক্রাণুর মান উন্নত হতে কতদিন লাগে?
➡️ গড়ে ৩ মাস সময় লাগে। তাই কমপক্ষে ৯০ দিন স্বাস্থ্যকর অভ্যাস বজায় রাখতে হবে।
উপসংহার
শুক্রাণুর সংখ্যা বৃদ্ধি এবং উর্বরতা উন্নত করা সম্পূর্ণরূপে সম্ভব যদি আপনি জীবনযাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনেন। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম, ওজন নিয়ন্ত্রণ, ধূমপান-মদ্যপান ত্যাগ এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করলে কয়েক মাসের মধ্যেই সুফল পেতে পারেন।
রেফারেন্স: Healthy Male – How to Boost Your Sperm Count and Improve ফেরতিলিত্য
source : https://healthymale.org.au/health-article/how-to-boosত-য়উর-স্পেরম-চউন্ত-আন্দ-ইম্প্রভে-ফেরতিলিত্য