জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্বনামধন্য একটা কলেজে ২৪-২৫ সেশনে অর্থনীতি নিয়ে পড়ছি ।।। প্রায় চার মাস হচ্ছে ক্লাস শুরু হওয়ার।। প্রতিদিন ক্লাস করি । খুব‌ই রেয়ার আমি ক্লাস মিস করি।। তারপরও আমার এখনো কোনো ফ্রেন্ড হয়নি ।।। অথচ অনেকর হয়েছে।। প্রথমে আমি ভেবেছিলাম তারা হয়তো পুর্ব পরিচিত। জিজ্ঞেস করলে বলে ক্লাসেই পরিচিত হয়েছে।। প্রতিদিন যার সাথে বসি তার সাথে হয় ।। পরের দিন ওকে খুঁজলে আর পাই না ।।পাইলেও ওর ফ্রেন্ডদের সাথে বসে ।।। আমি সবার কথা বলার চেষ্টা করি ।।।। এরকম না আমি চুপচাপ।। এখন ক্লাসে গেলে আমার অনেক খারাপ লাগে।।। যেতে ইচ্ছে করে না।। আমার কি করে নিজেকে বোঝানো উচিত

তোমার অনুভূতিটা একেবারে স্বাভাবিক — নতুন পরিবেশ, নতুন মানুষ, সবাই দ্রুত গ্রুপ বানিয়ে ফেলছে, আর তুমি বারবার চেষ্টা করেও কাউকে স্থায়ীভাবে কাছে পাচ্ছো না। এটা কাউকেই কষ্ট দিত। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ হলো: এটা তোমার দোষ বা তোমার অযোগ্যতার কারণে হয়নি।

নতুন জায়গায় বন্ধুত্ব হতে সময় লাগে—কখনও কারও ১ সপ্তাহ, কারও ৪–৫ মাস। তুমি চেষ্টা করছো, কথা বলছো, ক্লাসে যাচ্ছো — এগুলোই সঠিক পথ।

আমি তোমাকে তিন অংশে বোঝাচ্ছি:


⭐ কেন এমন হতে পারে (এগুলো সাধারণ পরিস্থিতি)

  1. মানুষ দ্রুত গ্রুপ করে ফেলে
    সাধারণত প্রথম ১–২ সপ্তাহে কারা কার সঙ্গে বসলো, তার ওপর গ্রুপ তৈরি হয়ে যায়।
    পরে ওই গ্রুপে ঢোকা একটু কঠিন হয়—but not impossible.
  2. তুমি যাদের সাথে বসছো তারা হয়তো নিজেদের গ্রুপ খুঁজে পেয়েছে
    তাই তারা পরের দিন তাদের গ্রুপে গিয়ে বসে।
    এটা তোমাকে অবহেলা করা নয়—এটা কলেজ জীবনের স্বাভাবিক ডাইনামিক।
  3. তোমার অমায়িকতা থাকা সত্ত্বেও প্রাকৃতিকভাবে ‘ক্লিক’ ম্যাচ এখনো হয়নি
    সবাই সবার সঙ্গে মানিয়ে যায় না।
    যে ২–৩ জনের সঙ্গে তোমার সত্যি মিল হবে, তারা একটু সময় পরে আসবে।

⭐ তুমি কীভাবে ক্লাসে নিজের মনকে শান্ত রাখতে পারো

১) প্রথমে নিজেকে বলো:
“বন্ধুত্ব করা আমার দায়িত্ব না—সময় হলে আপনাআপনি তৈরি হবে।”

এভাবে নিজেকে চাপমুক্ত রাখো।

২) ক্লাসে গিয়ে কারো সাথে বসা না পেলে সেটা ব্যর্থতা না।
অনেকেই একা বসে ক্লাস করে—এটা একদম লজ্জার কিছুই না।

৩) নিজের মূল্য বুঝো:
তুমি নিয়ম করে ক্লাস করো, কথা বলার চেষ্টা করো —
এটাই প্রমাণ তুমি সামাজিকভাবে সক্ষম।


⭐ বাস্তবে কী করলে আস্তে আস্তে বন্ধুত্ব তৈরি হবে

✓ ১) একজন? নাহ — ছোট ২–৩ জনের গ্রুপ ধরো

যাদের দেখতে একসাথে বসতে দেখো, তাদের গ্রুপে গিয়ে বলো:
“আজকে আপনাদের সাথে বসতে পারি?”
এই ছোট একটা লাইন ৮০% সময় আইস-ব্রেক করে।

✓ ২) গ্রুপ ওয়ার্ক বা প্রেজেন্টেশন—এটাই তোমার সুযোগ

অর্থনীতিতে নিয়মিত গ্রুপ অ্যাসাইনমেন্ট হবে।
সে সময় ১–২ জনকে ইনবক্সে বা সামনে গিয়ে বলো—
“গ্রুপ করছেন? আমি কি থাকতে পারি?”

এভাবে মানুষ খুব সহজে ঘনিষ্ঠ হয়।

✓ ৩) একই বেঞ্চে নিয়ম করে ৪–৫ দিন বসো

মানুষ তোমাকে পরিচিত মনে করতে শুরু করবে।
পরিচিতি → কমফোর্ট → বন্ধুত্ব।

✓ ৪) নিজের ছোট ভঙ্গিতে উষ্ণতা দেখাও

যেমন

  • “নোট লাগলে বলে নিও”
  • “আজকে লাস্ট ক্লাসটা ছিলো না, তাই না?”
  • “আগামী ক্লাসটা কোন রুম?”

ছোট ছোট আলাপ থেকেই বন্ধুত্ব তৈরি হয়।


⭐ এবং সবশেষে, একটা জিনিস মনে রাখো

বন্ধুত্ব হলো “একটা ভালো ম্যাচ” পাওয়া, জোর করে বানানো না।
তুমি চেষ্টা করছো—কিন্তু মিল এখনো পাওনি।
এটা সময়ের অপেক্ষা। তোমার ভেতরে কোনো সমস্যা নেই।

৪ মাসে না হলেও ৬ মাস, ৮ মাস বা দ্বিতীয় বর্ষে গিয়ে হঠাৎ এমন কাউকে পাবে
যার সাথে তোমার ক্লিক হবে—আর তখন ভাববে,
“এতদিন যার জন্য অপেক্ষা করছিলাম—এটাই তো!”

Leave a Comment